মেহেদী হাসান শাকিল এর কবিতা
০১.
লোনাপানি
চারদিক আমাকে নিয়ে হতাশ
অথচ আমি দিব্যি সিগারেট ফুঁকি
তোমার বাতির আগুন ধার করে
মহাপরিকল্পনা নেই আমার মিথ্যাে প্রলোভন নেই
মনের ভেতর বিশুদ্ধ আর্যসন্তান।
সোডিয়াম আলোয় যখন সকলের সাফল্য চূড়ান্ত
অনুসিদ্ধান্তের খেরো খাতায় আঁকছি সমস্ত অনশন
মুখ ফিরিয়ে নিয়ে গেলো যারা আছে কেবল আকুলতা
সম্ভাব্য ব্যার্থতার সমস্ত চাবুক আঘাত আমার অর্জন।
০২.
আগ্নেয়াস্ত্র
সমস্ত আয়োজন শেষে
চোখের ভাষার কঠিণ ব্যাকরণ ভেঙে
যদি কখনো তাবেদার আইনে
আমাকে বলয়ে বন্দি করো
আমি তোমার হবো অনায়াসে।
এই চোখ জাদুকরের অস্তিমজ্জা
রঙ্গিন বেহালায় শহরের করুন সুরে
তিক্ত জীবন বৃত্তান্তে
ভালবাসা বিলাসিতা বৈকি।
চৈত্রের শেষে বসন্ত বিলাসে
দুপ্পুরের রোদ গায়ে মেখে
রোমিও পরিচয়ে স্বস্তিবোধ
তাহলে বুঝে নিবো
জীবনবোধ কত পরিমিত।
অনেকের অনেক সুন্দর সাফল্য চূড়ান্ত
দিগন্তের এপাড় থেকে শুরু হয়তো
আমার গন্তব্য কেবল তুমি
বাহিরের থাকা আর কত?
বেরিয়ে আসো নয়ত দেখো নতুন দিন
সব জটিল অঙ্ক শঙ্কু করে সরল জীবন কাম্য
না দেখা হোক আমাদের, না হোক কথা
চোখের প্রেমের আজন্ম প্রেমিক হবো।
বলবে কি, চোখের জন্য ভালবাসো আমায়?
প্রেমিকার চোখ আগ্নেয়াস্ত্র তুমুল তোলপাড়ে ধ্বংস হয় ভেতর।
০৩.
চোখের নকশা
বহু বছর পর, ত্রিশ অথবা চল্লিশ
কখনো উলঙ্গ দুর্ভিক্ষে আমাদের দেখা হয়
চোখের কাজলের বয়স রেখায় শুধু চামড়া কুচকে গেছে
বিনিদ্র রজনীর যৌবন তোমার পায়ে এনে দিয়ে
অভিমান নয় অভিযোগ নয় বরং যত্নে থেকো প্রিয়
এই কথার কাঁটাতারে স্নেহ কাঙ্গাল আমি।
আমি প্রেমিক নই যৌবনের চুলের ঘ্রাণে তোকে চাইবো
আমি কামাতুর নই কাম বাসনার রশদ জুগিয়ে ভোগে চলবো
আমি কি আমিই জানি না
তোর আশপাশ আমার ভাললাগা
এটার সংঙ্গা আমার জানা নেই
কি বলে একে প্রেম নাকি ছলচাতুরী
আমি জানি না সত্যি।
ভালবাসায় অনুভূতিরা থাকে
স্পর্শ ঘ্রাণে প্রেম হয়
এখনো বলে দিতে পারি গলার তিল, চুলের ফুল আমাকে টানে।
চল্লিশ বসন্ত পেরিয়ে এসে দেখে নিস
আমি তোর, কোন সংবিধানে তোর চোখের জল আসে আমি জানি
আমাদের দেখা চিরাচরিত কথা বলা ভালো আছো,কেমন আছো বলা
শুধুই সংবিধান বিরুদ্ধ।
০৪.
নারী
আমাকে শক্তির আধার ভেবে
তোমার ভরসার হাত আমার বুকে রেখে
নিশ্চিত ঘুমাতে যাওয়ার সূক্ষ্ণ ইচ্ছা
এখনো আছে অথবা এখনো নেই।
সম্পর্কের মৌলিকত্বে আদিতে আমি তোমার
স্বার্থ অথবা ছিন্নমূলে কে যে কখন কার?
জীবনকে বাজি রেখে যুদ্ধ নিজের সাথে আজন্ম
একটি নারীর নাকফুলের শক্তি
ভালবাসার কাঙ্গালের হাত
হারাতে হারাতে যে সর্বদা অভ্যস্ত
তার হারাবার ভয় কিসে?
পৃথিবীতে নেই বলে কিছু থাকে না
হয়তো রুপান্তর, কখনো রুপের অন্তর
ডান থেকে বাম, বাম থেকে ডান
হাত বদল নচেৎ এপার ওপার
মুদ্রার এপাশ ওপাশ।
আমাকে ভরসা ভেবে দিন দিন নিজেকে নিজে ঠকাচ্ছো
হয়তো তুমিই জানো না, একটা পুরুষের গোপন শক্তি তুমি
পুরুষেরা স্নেহ কাঙ্গালে ভোগে, নারী স্নেহ কাঙ্গাল
পুরুষ দ্রোহ হলে নারী ষোল আনা দ্রোহ।
তোমার বিশ্বে একটা পুরুষের আবর্তন
তোমার হারানোর কিছু নেই বরং যারা হারাবার তারা হারায়
যে তোমার সে সাত সমুদ্রে পেরিয়েও তোমার
যে তোমার না, সে কখনো তোমার না।
তুমি নারী, তুমি জন্ম দাও
অন্যরা জন্ম নেয়, তোমার সব
অন্যদের জন্য এ বিশ্ব ভাড়াটিয়া।
০৫.
চোখ
আমার চোখে জল
তোমার কাজল নষ্ট হওয়ার জন্য
মাঝে মাঝে বৃত্তের বেড়াজাল ভেঙ্গে
নষ্ট হওয়ার অভিযোগে কতবার কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছি।
ধার দেনায় খাওয়া লোক আমি
এই হাসি বর্গা দিবো কিনবো জলনৌকো
অভিযোগ রাত বিরাতের ভেলায়
মাঝি মল্লার চক্ষুশুল হবো নিত্য।
আমি তুমি সে
অশ্লীল বাতাসে ভ্যাপসা স্নিগ্ধতা
ব্যাপনের ঘুমো ঘুমো চোখ
আমার হতে দাও তুমি
কাজলের দাগ নষ্ট করে।
০৬.
নাক ফুল
আমার তোমার বাঁধভাঙ্গা হারানোর ক্ষত
কখনো চমকিত আলোর ছটায়
ইথারের কথায় আবিষ্কার করেছি
তোমার নাকের ফুল আর ঢুলুঢুলু চোখের প্রেম।
দূরত্বের জ্যামিতিক ব্যাসার্ধে দূরে মনে হয়
আসলে কাছাকাছি এপার-ওপার
যোজনের আয়তন সমগ্র
পেয়ে ওঠার হিসেব কষেছো কাকতালীয় নাটকে।
যদি প্রেমিক হয় আমরা
নাক ফুলের নিলামে
বিক্রি করবো কারক সমাস সন্ধির বাহিরের জটিলতা।
০৭.
যখন লিখছি
ভেবেছো হারিয়ে গেছি চোখের তাঁরার বাহিরে
মনে যার বসবাস সে হারায় কি করে?
এপাশ-ওপাশ করে আমাকে খোঁজে হয়তো চোখের মণিতে রেখে অন্যের হয়ে দিব্যি মিশ্রিত খেলায় মেতেছো ঠিক অভিনয়ের পশ্চিমে।
আমার ছিলে থাকবে আছো আমার হয়ে
হন্যে হয়ে বিলাসিতার চাকচিক্যে
আত্মহত্যা মনের দায়ে অভিযুক্ত কাঠগড়ায় তুমি
দায় মোছন দায়িত্বে আমি আজও ভালবাসি প্রসঙ্গের উর্ধ্বে রেখে।
০৮.
নিত্য নিহত
প্রতিদিন গলাটিপে নিজেকে হত্যা করি
হারানো সময়ের মানে খোঁজতে
ভুলবাল মানুষের মাঝে
একটা মানুষ খোঁজার পাঁয়তারায়।
চারদিকে সকলের সফলতা
আমার কেবল আত্নহুতি নিবেদন
প্রতিদিন তাকে দেখার বায়না খুঁজি
খুতখুতে জীবনের মানে খুঁজি
কৌশলের সাংকেতিক চিহ্নে
স্লো পয়জনের মত মরছি নিত্য।
সাধ্যের সাধনার পূর্ণ কথায়
অন্বেষণ করেছি তুমুলযুদ্ধে
মনের বিরুদ্ধে মনের যুদ্ধ
অসহায় রয়েছি কেবল নিজের কাছে।
যোগ্য দক্ষ সুনিপুণ মাপকাঠি
আমার সমাজের উচ্চাসনের বিলাসিতা
আমাকে এনে দিয়েছি হারানোর শাস্তি
হারাতে হারাতে ক্লান্ত হলে
একদিন হয়তো পাওয়ার বাসনা পূর্ন হবে?
সে পর্যন্ত মরতে থাকি প্রতিদিন প্রতিরাত
মিলন হোক শেষ বয়সে
দেখা হোক কোন এক বিকেল বেলা বয়সের ছাপে
কেমন থাকা যায় একাকি বলার অপেক্ষায়...।
০৯.
ক্ষণিক শব্দের উৎপত্তি
অবশেষে দেখা হলো তোর সাথে
ঠিক বোবার মত তার বিতান যোগাযোগ তাকিয়ে থাকা ফ্যালফ্যাল অনুভূতি
আটকে গেছে আমার সিগারেট টানে।
অচেনা আগন্তুক
জানা চেনা যেখানে সব ব্যার্থ
বেহুদা অপলাপে সংলাপ আয়োজন
আমি-তুই বোবা টেবিলে রুদ্ধদ্বার।
১০.
আগন্তুক
আগন্তুক হয়ে হুট করে
বিক্ষিপ্ত মনের ভেতর ঝড় তুলে
দেদারছে চলছে তোর আনাগোনা
কেবল আমাকে অপরাধী করে।
সৌম্যতায় চুমুর যে চিত্র আঁকবো বলেছিলাম
হারাবার শুকতারাগুলো প্রায়শ্চিত্তে অচল
অথচ ভেতরের তুমুল ঝড়।
দূরত্ব কোথায়?
এইতো বেশ জীবনের মুখ্য
কলের বাতাসে ভ্যাপসা স্নিগ্ধ
বছরের পর অপেক্ষার মেয়াদ করেছে দীর্ঘ।
আহ্নিক গতির নিয়মে
হয়তো দেখা মিলবে
পরিচয় হবে
আমরা ভালো কিছু ছিলাম কখনো।
থেকে গেলাম শুধু আগন্তুক
ব্লকলিস্টের সবুজবাতির বিপরীতে
বৈরীতার মুখোশের সাথে দ্বন্ধে
আকাশের ঠিকানায় চিঠির অপেক্ষায়।
১১.
কবিতা ও তুই
লিখছি তোকে নিয়ে
চোখের কোণে জল
সমস্ত আপডেট বন্ধ
বেখেয়ালি আমাকে বেখেয়াল ভেবেছিলি
আমি তার থেকেও বেখেয়ালি।
প্রতি বৃহস্পতিবার
আড়তির প্রস্তুতিতে
তুই যখন আমার দেবী হতিস
সমস্ত প্রেম দিয়ে
বানাতে চেয়েছি নিরাকার নকশা।
আমার পূজোর তুলসির মূলে
জল ঢেলে কপালে কুন্ডলা
একমুঠো প্রেম ওজনে কত হয়
হিসেব চাচ্ছি সবশেষে।
দূরত্বের আলোকবর্ষ
স্পর্শ গন্ধের বাইরে
অনুধাবনের খুব নিকটে
চোখ বন্ধের ক্রিয়ায় তুই।
বাসনার খেলাঘরে
তুই নাচিয়েছিস ইচ্ছেমত
যার হারিয়েছে সব
তার হারাবার আছে কি বাকি!
ঠিক করেছি, বারোদি যাবো
প্রণাম ঠেকাবো লোকনাথ পা'য়
জিজ্ঞেস ছিল, প্রেমের স্থায়িত্ব কতকাল
সেকেন্ড-মিনিট-ঘন্টা-দিন-বছর-মাস
নাকি ভালো আছি, ভালো থেকো দূরত্বে?
ছলনার মুন্সিয়ানায় দূরে হারাবো
জানা ছিলো কথা ছিল
হারাবো প্রক্সিমা সেন্টারের বাহিরে।
খুব কাছে থেকে ভ্রমণ করবো
দেখা হবে কথা হবে না
বোবার আচরণে বোঝে নিস্ চোখের ভাষা।
তোকে চাই বলা হলো না
চিঠির চিরকুটে, ফোন মেসেঞ্জারে
আড়ালে থেকে কতকাল হলো আমাদের
কাছের আসার নীরব কবিতা।
চোখের গোপন জলে খুঁজবি
পাবে না আমায়
চিহ্নিত কর্মে প্রমাণে।
যেটুকু ছিল ভালোবাসা
সবটুকু উজার
শূন্য পূরাণে লিখছি কবিতা।
১২.
টুকলি
অপশন খোলা রাখছি
তোর এলোকেশের মত যদি পারিস
আমাকে সামলে নে
অগত্যা প্রেম বদনাম রোজ বেলা শালিশ দেয়।
জীবন মানে কি?
-খবর হয়েছে পড়শী পাড়ায়
-অনুরাগের কথায় কিছু করা
-ফুল ও সুরভীর মেলবন্ধনে।
আর কবিতার মানে?
-তোকে চোখের সামনে ধ্যানমগ্ন
-আড়চোখে মিষ্টি ভ্রমের ভ্রমণ
-চাওয়া পাওয়ার বায়বীয় ইশারা।
মানের শেষ মানে
'মানুষ' প্রকাশিত সত্য।
প্রেম ধ্রুবক
তুই চলক
আমি তুই নিতান্তই সমীকরণ
কখনো মিলে কখনো মিলে না
তাই অপশন খোলা রাখছি।
১৩.
এন্টিসেপটিক চুমো
খুব ক্ষত নিয়ে ঘুমের দাওয়াত রইল
সব সময় পুঁজি করে দিবো
অনুসন্ধানের মিটিমিটি চাহনি
ফোলা ঠোঁটের আঙ্গিনায়।
বেলীফুলের গোড় বিরোধী গন্ধের স্পর্শ
চুলের বেণীর অমিমাংসিত দ্বৈরথ
প্রতিদিনের ক্ষত ক্যান্সারে আক্রান্ত
মনের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থাকা কিছু সময়।
বয়স ছিল বোঝতে চাওয়ার হিমায়িত কষ্টে
স্নায়ুযুদ্ধের শীতল শয্যা
প্রেমিকের নীল কন্ঠের আক্ষেপ
জেনে গিয়েছিলাম আমরা ভুল।
পরিণত সময়ের সঠিক সিদ্ধান্তের ওপর
দৌড়ে দৌড়ে প্রথম শ্রেণির নিক্ষেপ জ্ঞান
সকল তন্ত্রের সাধনরীতিতে পদ্মচিহ্নের বেড়াজাল
আমি তোমার বিভাজন থেমে গেছে।
ঘুমের দাওয়াত রইল
সকল চোখ ফাঁকি দিয়ে
ক্ষতের কষ্ট নিয়ে
এসে দেখো সেই আমি চিরচেনা।
এন্টিসেপটিক চুমোর অপেক্ষায় ...।
১৪.
নিষিদ্ধকরণ অনুভূতি
প্রতিদিন সার্চ বাটনে ক্লিক করি
দেখি অত্যন্ত আগ্রহে
সে আছে কি না?
সে কি চলে গেছে কি না?
ছোঁয়াচে রোগের অশ্লীল সংবিধান
স্নেহ সীমান্তের কাটাতারে
হাসি কান্না শব্দের এনালাইসিস
কেবল অনুভূত কম্পনের বিস্তার।
আঁতকে থাকা বেসামাল পরিস্থিতি
ভয় ভালবাসা আবল তাবল
প্রযুক্তির উৎকর্ষে সহজেই জানতে পারি
সে ভালো আছে,তারা ভালো থাকে।
মনের গতিবিধি কখনো পরিমাপ করি
ফিলিং স্যাড অথবা মিসিং সামথিং স্ট্যাটাসে
ঝুমঝুম টিনের চালে বৃষ্টি হলে
হয়তো কখনো সে খোঁজে অথবা বেমানান অনুধাবন করে আমায়।
সে কাঁদে বলে আমি খুঁজি তাকে কবিতায়
যে কান্না মায়াবী অদৃশ্য
মুখের বেরিয়ে যাওয়া শব্দ মনের তড়িৎ প্রবাহ
আমাদের মিলন হলে হয়তো অস্পষ্ট প্রেম হতো।
সে আর দূরে থাকে না
কখনো মনে কখনো সার্চ বাটনে
থাকে আশপাশে দুই মিলিয়ে।
প্রতিদিন সে পরিবর্তন হয়
নীল শাড়িতে প্রোফাইল পিকচার চেঞ্জ
মনের আকুতির বহিঃপ্রকাশ
আরও কত রকম ইত্যাদির আবর্তন।
আমি দেখি পর্যবেক্ষণ করি
ঠিক দূর আকাশের তারার মত
ধরা বা ছোঁয়া অথবা কথা বলা যেনো
সংবিধান নিষিদ্ধ।
১৫.
বরফ কল
অবেলায় জলের গান কলের সুর
দিব্যি মিশ্রিত শ্রদ্ধার আসন
ওঁত পেতে সফল জীবনের চাটুকারিতা বখতিয়ারের ঘোড়ার মতো মনঃস্থির
যাযাবর আর্যের মত ব্যাবহার।
ঠুকে আগুন পোড়ালে তুমি
আমার কি তাতে আসে যায়!
অনুর অবিভাজ্য সকল শর্তে
বিষাদের ছাপ স্পষ্ট
হুলিয়া জারি করে
নিয়ে গেছো অসীমের রবীন্দ্রনাথ।
বরফ কলে গলছে সমুদ্র মন্থন
সূর্যের সাথে পাল্লা
অনুভবের তীব্রতা উৎসাহ
বেলাশেষের অবিরাম অগ্রযাত্রা।
জরুরি নোটিশ গেছে ঠিকানায়
জ্ঞাতার্থে সবার আশপাশে
আবর্জনার স্তূপ উধাও হয়েছে
বেঁচে থাকার পাখির অস্তিত্বের বাঁধনে।
১৬.
জীবন সায়াহ্ন
ভেতরের গর্জন কাউকে দেখাতে নেই
আয়না জানে কতটুকু তারতম্যে মেপে
দেখেছো বয়স মিটার রিডিং
পরিসংখ্যানিক তথ্য উপাত্ত।
না পাওয়ার লেনদেন
অভিজ্ঞতা থেকে বাস্তব তিক্ততা
ক্রমে ক্রমে জটিল জীবন সমীকরণ
জীবন নাশের অবাধ্য বিধান
ঘুণপোকা সমাজে আসল সংবিধান।
জীবন থেকে নেওয়া স্বচ্ছ অভিনয়
সুখের বিপরীতে খোঁজেছি অনন্তের সিড়ি
জ্ঞানের কল্কিতে কলঙ্ক কেবল
ফণিহারা মনসার ছোবল।
ভেতরের গর্জন সাতচল্লিশ
সব বোঝানো যায় না
চোখের জলে আসা টলমল
নিরিখে বোঝায় জীবন অনিশ্চিত।
ধুলোর পৃথিবীতে নিরাপত্তা বারণ
বেঁচে আছি, বেঁচে চলেছি এইতো জীবন।
১৭.
আয়না
আয়নায় দাড়িয়ে নিজেকে দেখি
পরিমাপ করি ভেতরের কুৎসিত কালো দাগ
পোড়া শহর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে
মোমের আলোয় ব্যাতিক্রম স্পর্শে।
বেঈমানীর প্রোস্টিটিউট আলোক মালার সীমান্ত
বেশ কিছু ই তো আমি জানি
সেই থেকে দূরে থাকি
আয়নাবাজির খেলায়।
গতর বদল, চেহারা বদল, হাত বদল, রুপ বদল
আমি ঐ ৯৬'থেকে একই রেখায় আঁকা
কাল্পনিক অস্তিত্ব নিয়ে বেঁচে আছি।
আঁতেল থেকেছি বহুকাল
স্বপ্নের মত খোয়াবে এসে
ধুলিতে স্বপ্ন ভেঙ্গেছো আমায়
খোঁজতে খোঁজতে হয়েছি বিগত
ছয় জীবনের বিশ্বকর্মা নৈবদ্যে।
সকল বৈতরণী পার হয়ে গেছে সবাই
প্রচার হয়েছে আমি অভিযুক্ত
হাতকড়ার আবশ্যিক পূর্বশর্তেই
স্বপ্ন মরে গেলো, প্রস্থানের নিভৃত ছায়ানাট্যে।
এইতো জীবন নিজেকে দেখছি আয়নায়
কাল ভোর হলে এসো সখি আমার দুয়ারে
কলঙ্কের খোঁপায় দেবো জবা ফুলের পূজো।
১৮.
দেখে এসেছি সব
চোখে চশমা
হাতে কলম
মনোযোগ ডাইরিতে
একটা জীবন বৃত্তান্ত খোলাসা করছি
মায়ের পেটে ব্রুন থেকে
মনে হয় দেখে এসেছি সব।
আস্তিক-নাস্তিক-অজ্ঞেয়বাদী-সংশয়বাদী
বহু ট্যাগ আমার পেছনে লেগে যাবে
তা জানি...
জীবন সত্যায়িত করা ফটোকপি
কার্বন কপিরাইট আইনে
সেকেন্ড হিসেব সময়ে শেষ ভুল
জন্মের পর জন্মের খেসারত।
দেখে এসেছি যে সব...
তারবিহীন বেতারে
কথা নেই বহুদিন হলো
ফোনের ফ্রেমে মরচে যাওয়া
ওয়ালপেপারে আমি নেই
গান নেই ' আমার ভিনদেশী তারা '।
নেই বহুকিছু আছে অনেক কিছু
কিছুর ভিড়ে ছুটেছি স্মৃতির পিছু
সিগারেটের শেষ টান অব্দি কত অপেক্ষা
জীবন ফু'ময়, এসে যায় এপার ওপার।
লীলার নৃত্য অথবা অবাস্তব স্বপ্ন
কুঁড়ি বছর আগে যে বয়স রেখে এসেছি
রতন বাবুর ঘাটে
ঘটের ঘটি ঘটনার ঘটকালি
কিছুটা সময় অবচেতনে কেটে গেলো।
বার বার মনে হচ্ছে জন্মের পুনর্জন্ম
সকল কিছু শিখেছি সামনের দিক
শিশু থেকে কিশোর, যুবক থেকে বৃদ্ধ
প্রিয় থেকে প্রিয়তমা হারানো
আমি সব জেনে গেছি
বোঝেছি অতি যত্ন রেখে
'সব পেলে নষ্ট জীবন'...।
১৯.
প্রেম জন্ম
প্রতিদিন প্রেমের পুনর্জন্ম
পুরনো সিক্ত ভালবাসায়
হর-হামেশা নতুন করে
আবিষ্কার হও আমার বিছানায়।
তবুও প্রেমিকের বদনাম
'তুমি না ঠিক সেকেলে'
অলসতার ভিড়ে
আমার বিছানার খামচে ধরা চাদরে।
ভালবাসার ফেরীতে
সিদ্ধহস্তে পথচারীর
আধো কপালের চোখ রাঙ্গিয়ে
নতুন ভালবাসার সন্ধানে
শত পথের হাজার গলিতে অপেক্ষা।
বড্ড খুনসুটিতে প্রেম জন্ম নেয়
নতুন করে, একটা চুমোয় অথবা এক কাপ চায়ে সমস্ত রাতের চিৎকারে।
স্নানশেষে ঘোর অমানিশায়
ধস্তাধস্তিতেও প্রেমিকের বদনাম
প্লিজ!
আমাকে ভালবাসতে যাস নে
পুনর্জন্মে নতুন সকালের প্রেম হয়ে
ঠিক ফিরব
যে দিকে তোর পরিচিত গলি।
সন্ধ্যার প্রহরে আকাশের তারা গুনে গুনে
নিভে যাবে, আরেক জন্মের প্রেম।
সবিশেষে,
প্রতিদিনের মত প্রতিদিন, চলে যায়
তোর চেনা গলিতে।
২০.
হাসি
সীমাহীন সীমাবদ্ধতা
দক্ষ সুনিপুণ কারিগরের মত কাঁটাতার
অস্রহাতে এপাশ-ওপাশ বর্ডার লাইন জীবন।
এক জীবন; মানুষ কখনো মানহীন
কখনো অজস্রতার সুখনিদ্রা কাতর
কখনো বিবেক কেনে
বুদ্ধি বিলোপের ওয়াদা দিয়ে।
কর্মের ক্রমে চলৎ মন
জুয়া খেলতে আসা হিসেব বিজ্ঞান
এতদিনে সে জেনেছে
বেঁচে থাকা চরম বাস্তব।
লাইন কন্ট্রোল অথবা কন্ট্রোল লাইফ
সে যা হোক, মানুষ বাঁচে কর্মে
বাঁচে বেঁচে থাকার মর্মে
আর সকল সীমাবদ্ধতার উর্ধ্বে
বিশ্বজয় হাসির কাঁটাতারে।
২১.
চোখ লাল
জলছাপে তোকে খাতায় আঁকছি
সমস্ত তন্ত্র-মন্ত্রে বহু আয়োজনে
বহু দেনায় জন্মের ঋণ
পুনর্জন্মের অসুর সময়ে
কেবল তোকে আঁকছি।
নেশার উপসর্গ আবছা আবছা চোঁখে
তুই কেবল বায়ুবীয়
এই আছো এই নেই
কেবল তোকে আঁকছি।
আটকে আছি রাত্রি জাগরণে
কালি-কলমের সঙ্গম দেখার অপেক্ষায়
কতটুকু ব্যাথা বিষন্ন হলে
মন থেকে মুখ; মুখ থেকে কলমে; কলম থেকে আমার নিত্য কল্পনার খেরো খাতায় প্রসব হয়?
কেবল তোকে আঁকছি...!
স্নেহনিলয় অবুঝ প্রিয় ভালবাসা আমার
আবেগের লভ্যাংশে
ক্ষতির ক্ষত সজিব দাগ
কত থেকে কতকাল রাত্রি জাগরণ ঘটিয়েছে পুরুষ শুদ্ধে।
সেকাল একাল মিলিয়ে চলছে
ঢুলঢুলু সরল দোলক জ্ঞান।
ঘড়ির দিকে করুনে
অথবা ঘড়ির বিপরীতে
তবুও লিখছি তোকে
আঁকছি খাতায়।
ভুল দ্রাঘিমায়
তোকে মানচিত্র ভেবে
এঁকেছি এক মহাবিশ্ব
কাছে কাছাকাছি অথবা আলোকবর্ষ দূরে।
নালিশের বার্তায়
আমি চক্ষুলাল। বিবর্তন পাগল।
ক্ষণিকের প্রেমিক।
২২.
বাস্তবতা
রাত তিনটে চোখে ঘুমের চেয়ে প্রেমিকার নিঃস্তব্ধতার শরীর দেখছি
গাঁজা চুরুট দিব্যি ভুলে ক্লান্তির নেশায়।
বদ্ধ উন্মাদ ভাবনায় আমাকে নিয়ে হাসে
কেউ কেউবা ক্যালকুলেশন স্পিড মেপে
ভেতরকার ক্ষরণ দেখতে চায়
অবহেলা আর চাতুরীর হিস্যা থেকে
বৃষ্টির রাতে কোলঘেষা বৃষ্টি ফোঁটা
হারানো তোমাকে অথবা আগেকার বছরগুলো
ফেরত চায়।
আমি তো দেউলিয়া
চুমুর কারক প্রেমিকের সমাস
মিলনের জীবনযুদ্ধে পোড় কৈফিয়তে
ব্যাকরণ নিচক অর্থহীন।
আছো আছি কাছাকাছি
এক চিমটি অনুভবে
মনে হচ্ছে ঢুল চোখে ঘুম
তুমি নেই আমি তো নির্ঘুম।
রাত তিনটে টিনের চালে বৃষ্টি
ফেসবুক প্রোফাইল চেঞ্জ
আমি চাই নীল শাড়ি
সে বলেছে আড়ি।
দরজা খোলা হাত দাও
খোঁপায় দেবো জবা ফুল
রাত তিনটে
জানলা খোলা...।
২৩.
অনু কথা
সব ঝড় থেমে গেলে
আগের মত সব ঠিকঠাক হলে
কষ্টের পোপন অভিনব ডাইনোসরেরা
দাগের কালিমা মোছার প্রায়শ্চিত্তে
নতুন করে মনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা
গ্রহণ করা হবে কি?
দ্বিরুক্ত জিজ্ঞেস ...!
২৪.
অদল চেহারা
ধরো,সবাই স্বর্গের সুখ পেয়ে গেছে
সাফল্যের পদায়নে চারদিক
আমার জাত ধর্মের বর্ণহীন পরিচয়ে স্বস্তিবোধে তোমাদের বিশ্বে আমাকে বানাবে?
কতকাল অপেক্ষা করতে হয় সাফল্য ধরতে
আমার জানা নেই
নির্ঘুম ক্ষমতায় ভালবেসে যাকে আড়তি করেছি
সে যে দেবীর আসনে নেই।
মাথার দিব্যি ছিল বলে, প্রেমিকা যখন
প্রশ্রয়ের আদলে কনসার্ট প্রাসঙ্গিক
প্রশ্নের কাঁটাতারে আবদ্ধ।
এতটুকু দুঃখের সহ্য অবহেলায়
আলগোছে আঘাত
সমস্ত বিক্রির তদবির বাণিজ্যে
দালাল চক্রের জৈবিক বিশ্লেষণ।
টকশো'র রঙ্গিন চটুল কান্ডে
সংবাদ এসেছে
জনমত গড়েছে
এতকাল আমরা কি ছিলাম
প্রেমে প্রেমিক /
মনের ব্যাবসায়ে বণিক?
২৫.
জানালা
আমাদের মিলন হলে বুঝি
হিমালয়ে দুঃখ রাখার জায়গা বুক ফাঁটা চিৎকারে তিব্বতের যোগীদের অনশন ভঙ্গে
মনের আন্দোলনে নিষিদ্ধ শহরে পরিণত হতাম
এ জন্মে আপাতত মিলন না হোক
এ জন্মের অপেক্ষার তাগিদে অপেক্ষায় আছি।
হাতের ওপর হাত রেখে অনলাইনবাজি
নতুন সময়ে আগামী নিয়ে ভাবছো
আমার স্পর্শের অভিকর্ষজ ত্বরন
সহজেই ভুলে গেছো?
হরতাল চলছে মন খারাপের গাড়িতে যাত্রা
যে মন থেমে গেছে আগামীর প্রয়োজনে
নিষিদ্ধ পল্লীতে যখন তখন তলব
বেশ্যা হয়েছি বিগত অতীত বাদ দিয়ে।
ভেবেছো, পুরুষ আবার বেশ্যা হয়!
না পাওয়ার সংবিধানের কাঁটাতারে
আবদ্ধ উপস্থিতি কেবল পীড়া দেয়
অক্ষর আকৃতির বাঁকানো তিলে
প্রেমিকের জায়নামাজ বিছিয়ে ধ্যান।
সমস্ত অনশন ভেঙে যদি বলো
আমি হিমালয় নিজের ভেতর করে
নিজের শহরে নষ্টালজিক হবো আবার
চিরকাল অল্প কিছু সময়
অল্প ভৌগোলিক নিয়মে প্রেমিক হবো।
আসন পেতে বসেছি জীবন বোধের
অকালে নষ্টদের দানবমুঠোতে ধরা
নেশাখোর চোখে জল খুব একটা আসে না
সমস্ত আলিঙ্গন ভুলে চলে এসো
আমার মনের বিরুদ্ধে অভিযোগ
তবুও জানালা খোলা।
২৬.
প্রেম জেনেটিক্স
কিছু কালের জন্য হারিয়ে যাবে?
কিছু সময় নিয়ে হুটহাট আবদারে
অযথা গালির মজলিশে
নতুবা তিলাত্তোমা প্রেমে যদি পড়ে কেউ।
তুমুল সময়ে তুখোড় প্রেম ঝলসে গেছে
কপালের ভাঁজ চোখের ডাগর চাহনিতে
উদ্ভট চিরন্তনে অবধি মানুষ আমি
আমাদের এককাল ভালবাসা ছিলো
একপক্ষীয় দ্রুপদের মত
আমি এখনো বাতির সলতের আলোয়
পুরনো স্মৃতি ভাঙ্গি গড়ি
নিজেকে ক্ষয় করি
কেবল 'কেমন আছো' শোনার অপেক্ষায়...
২৭.
দেহ বন্টনে প্রেম বারণ
কথা ছিলো আমাদের
সমস্ত রাজ্যের হাসির বিনিময়ে
তোমার বকঠোঁটে চুম্বন কর্জ করা
প্রেমিক হওয়া রোমিও মন
ভেঙ্গেছে কতবার বিন্যাস বণ্টনে
কতজন কত মহাজন!
নির্বাসিত চোখে আমাকে খোঁজে খোঁজে হয়রান
তবুও দেখা নেই কথা নেই
আজন্ম ভালবাসার তৃষ্ণা
স্নেহ সীমানায় কাঁটাতার।
এই যে আমাকে ভেবে তোমার জীবন
অস্তমান সূর্যের সাথে পাল্লা
কখনো কি দেখেছো,জীবন সুন্দর
যেখানে প্রেম বিষয়রাশি অনুসিদ্ধান্ত
সূত্রের সফল প্রয়োগ নেই...
শিখেছি, শিখিয়েছো প্রেমে পড়া বারণ
দেহ বন্টনে প্রেমিক হওয়া পাপ
কলংকের দেবালয়ে,' ওগো তুমি যে আমার।'
২৮.
আগুন পানি
আগুন পানি হাওয়ার সাথে
ইদানিং ধার কর্জের খেলা খেলি
কখনো সুসময়ে কখনো আওড়ালো
সিঁদুর মাখা কপালের ভাঁজ নিয়ে।
আমার এ খেলা বেশ পুরনো
পুরনো বুলি নতুন করে ঘেঁটে
অস্থির প্রায়শ্চিত্তে চাপাতির হুমকি
প্রেমিকা যখন অসুরের রুপ নেয়
ভেতরের কলিজার পুড়া দগ্ধ গন্ধ হয়
তামাটে শরীরে সঞ্চারিত প্রেম চাষ হয় না তখন।
যাকে প্রেমের দাবি করে অনশনে নেমেছো
দরজায় কড়া নেড়ে হুমকির অপবাদ কালিমা
আমি আবার সেই পুরনো ভুলে অস্থির হচ্ছি নিত্য।
শহুরে বক পাখি...
আমারও জানালা খোলা
অপেক্ষায় থাকি
আগুন পানি হাওয়ার স্পর্শে
ছোঁয়াচে রোগের আশকারায়
তোমার বেনিয়াদের অংশগ্রহণে।
আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url