সাজ্জাদ হোসেন পলাশ এর কবিতা

 
১.
তোমায় না ছুঁয়েই  চলে যায় ফাগুন
তোমার নেশায় না মেতেই
গন্ধ না মেখেই চলে যায়;
স্তব্ধ হয়ে রই!
কখনো অঝোর ক্লান্তির একছটা তোমার-আমার গা ঘেসে গিয়েছে
আর উচ্চারণ করেছে নির্জন দুপুর। 
যা উপলব্ধির ক্ষমতা ইহকালেও ছিলোনা
খোপায় পলাশ না গোঁজার আগেই
তার অপমৃত্যুর কালিমায়
ধুয়ে মুছে যায় ফাগুন  
যা আমার জানা হয়নি কখনো।

প্রিয়, 
তোমার রহস্য মাখা মনের খেয়াল অজানাই রয়ে গেল,
ঠোঁটের ভাঁজে ভাঁজে বিস্তৃত মহিমায় ডুবে যাওয়ার আক্ষেপ ফুরোলো না!

২.
অজান্তে প্রেমে পড়ি বারবার
প্রায়শই পুড়তে পছন্দ করি
আকর্ষণীয় না হলেও
অজান্তেই আকর্ষিত হই
ভুল কিছুর উত্তরে হোঁচট খাই বারংবার
আকাশ ফাটা সাহসে ভাসি
খসে যাওয়া তারার সাক্ষী হই
আঁতকে উঠি না-পাওয়ার উপলব্ধিতে
হয়ে যাই মস্ত নগরীর অপছন্দের ছেড়া কাব্য।
থাকে অজানা খারাপ লাগা
হারিয়ে যাওয়া না পাওয়া শরৎ।

৩.
দাবানলের আগুনে পুঁড়ে যায় প্রেম  
তখন হাওয়া হয়ে উড়ে যাওয়াই ভালো।
তার অবাধ শিখায় নষ্ট চন্ডীর কুরুক্ষেত্র বেধে যাওয়া শ্রী
হাওয়ার তীব্রতায় ডানা ঝাপটানো পাখির নিরুচ্চার আকুতি যেনো
তার উপাখ্যানের সাক্ষী 
নিনাদ বিহঙ্গের সুরে ভৈরবী কন্ঠের উন্মাদনার ঝড়।

৪.
বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে ভূখণ্ডে
শ্রাবণ আসতে দাও
যেমনটা আসে নির্মল আকাশে
শরৎ এর জোৎস্না
শুষ্ক উপমায় বৃষ্টির সঙ্গে থাকা হয়ে উঠবে।
শ্রাবণ আসতে দাও 
মেঘ মল্লারে দু'জনের মিলন ঘটবে
নিয়ে আরো কিছু
তোমার সাথে আমাকে ভাসাবে অল্পের বিনিময়ে।
যারা বলে তোমার নিশ্বাসে বিষ জড়ানো
তাদের বলি- বিষ ঘোর কাটতে দাও
শ্রাবণ আসুক বৃষ্টি হোক।

৫.
স্বপ্নের ফিলোসোফিতে অজানা নানান আধিপত্য জুড়ে প্রেমের অপমৃত্যু। 
তার অসঙ্গত বিশ্লেষণে বাহানার দ্বিধা
আর ঐশ্বরিক কৃতজ্ঞতায় অঝোরে বর্ষন
যার এক চিলতে মেঘে
কাগুজে উড়োজাহাজের সূত্র।

৬.
অনায়াসে কাঁটা তার ডিঙিয়ে
তোমায় ধরতে চেয়েছি বহুবার 
স্বপ্নে দূর নীলিমায় ছুটিয়ে কত সাম্পান 
দেখেছি নীলাঞ্জনশোভিত মুখখানি তোমার, কতবার ... ! 
তবুও জানিনা- কেনো তোমায় এতো হারানোর ভয়
জানিনা- কেনো হয় এতো কোমল বর্ষন।

৭.
তোমার অপরিকল্পিত স্পর্শের ক্ষাণিক ছোঁয়া
সাঁঝের আলোয় মনে ছায়া এঁকেছিল। 
অতঃপর হীরকচূর্ণ শহরে
তোমার এলোমেলো পথ ভরে ছিল
কালচে ধোঁয়ায়।
আধিপত্যের ঝোঁক সেখানেই আসুক
যেখানে তুমিময় সব শান্ত হয়ে রয়
যেখানে ছড়ায় না শোকের বিজ্ঞাপন 
এমনই প্রহরে ধোঁয়াটে  নজরে
একলা শহরে নিয়নের প্রদীপ জ্বলে
যেখানে হিপোক্যাম্পাসে নিসৃত হয় স্মৃতি
যেখানে কারো গল্প মিশে যায় বিষন্নতায়।

৮.
তোমার সুগভীর চোখের আঁধারে আমার নিত্য জুয়া খেলা
দিকভ্রান্ত পথিকের মতো
আমার নিত্য যাওয়া আসা
আমার সমগ্র সত্ত্বা যেন
বিলীন তোমার মাঝে।

ভালোবেসে, ভালোবাসা পেয়ে 
জেনো- এই জীবন 
অনায়াসেই কাটিয়ে দিতে পারি
তুচ্ছ বাক্যলাপ দিয়ে।

৯.
বড্ডো একলা হয়েছি আজ
স্পন্দন এর শব্দ শুনতে পায়চারী করতে হয়
পথের আনাচে কানাচে দিকভ্রান্ত পথিক হয়ে।
তবু আর কত সচেতন অবহেলার বাহানায়
ভালোবাসার অমোঘ মিথ্যে প্রলোভনে  ভাসাও! 

উষ্ণ আলিঙ্গনের মোহ ভোলার শোক খুঁজতে হয় ভাঙা নৌকোয়
মুক্ত আকাশে উচ্ছাসিত পূর্ণিমায়।
মিথ্যে নিরবতায় ব্যস্ত ভাবনা
বুকে সৃষ্টি করে ক্ষনস্থায়ী বাসনা
যে বাসনায় একা বেঁচে থাকতে হয় প্রিয়!
ঢেউহীন বানের জোয়ারের শুধু শ্রাবণের হা-হুতাশ 
ওষ্ঠের উদাসীনতা জুড়ে শুধু কল্পনার বসবাস।

১০.
কোন কিছুর সীমানায় ব্যারিকেড মানেই
স্ব-স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ
আর এ হয়তো নতুন কিছুনা।

তোমার কাছে গিয়ে
তোমার স্পন্দন এর শব্দ শোনা
আমার হয়নি কখনো
যদিও বিষে ডোবার ইচ্ছে আমার অনেকবারই হয়েছিল
তবে অনুমতি হয়নি।
কতবারই নিজেকে
তোমার মধ্যে নিলাম করতে চেয়েছি
তা আর নতুন কি!
বলতে পারো আবারো
স্ব-স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ হয়েছিল।

১১.
দেখো কৃষ্ণপক্ষ কিভাবে গ্রাস করছে তোমায়
রক্ত রাঙা করে কিভাবে তোমায় নিমিষেই কাবু করে নিচ্ছে তার অন্ধকার মুখে
তোমার নিষ্প্রান চোখ দুটি কিভাবে অসহায়ত্ব অনুভব করছে
তা খুব সহজেই বুজতে পারছি
তোমার ক্লান্ত মুখে মলিন চাহনির
বেমানান দৃশ্যটা দূর থেকেই দেখছি
নিজেকেও কেমন জানি তোমাকে গ্রাস করা আঁধারের সাথে গুলিয়ে ফেলছি

১২.
গ্রন্থের গভীরে রমনীর আকস্মিক প্রেমের সংঙ্গা
প্রতিবাদী শহরে নগরে গড়ে উঠেছে রমনীয় ভাস্কর্য 
সর্বাঙ্গ বিলীন হচ্ছে
দুটি ওষ্ঠের ভালোবাসা চুপসে পরছে মূর্তির শ্রাবনে
ইতিহাস নিংড়ে ঐশ্বর্য সাজানো
শিল্পীর হাতে অপহরনের নীল নকশা
সঙ্গে আলোক স্তম্ভের হিসাব নিকাশ
কৈফিয়ৎ কেবল বিচূর্ণ হাওয়ার বেলাল্লা মশকরায়।

১৩.
প্রকৃতির আড়ালে ঠিক নিয়ম করেই উঁকি দিচ্ছো
কিন্তু নিজেকে অনায়াসে বিলীন করতে
পারছো না হাসনাহেনার মতো করে
সোডিয়াম আলোর মাঝে খুব
তারাতারিই মিশে যাচ্ছো,
হয়তোবা মিশে পরতে চাওনি ;
বাধ্য করা হয়েছে সময়ের স্রোতে,
বলতে পারো
তেমনি আমিও একটা অক্ষুণ্ণ স্বাদ লালন করছি তোমাতে হারাবার।
ভালোবাসা নিয়ে একবার এসো নবনীতা
আধাঁরটা নিমিষেই ঘোচাবার।

১৪.
জোছনা দেখার ছলে প্রতিনিয়তই
যাওয়া হতো তোমার ঘ্রাণ শুকতে
তবে প্রতিনিয়তই তোমার কাছে
না যাওয়ার অধিকারটা ছিলো বেশ।
তোমার মোহের চরম উত্তেজনা
স্বর্গের মতোই মনে হতো।
অতঃপর সেই সোডিয়াম আলোর নিচে
বিষের কাপে চুমুকে চুমুকে
সেই তোমার মোহের ভ্রম থেকে ছুটি।

১৫.
অবিরাম হেঁটে উদ্দেশ্যহীন গন্তব্যের দিকে
দৈনন্দিন যাওয়া হয়
ক্ষনিকের জন্য হলেও সেই গন্তব্যে
তোমার ভাবনা আমায় কাবু করে
আমার গা শিউরে উঠে! 
এখন আবার সেই ভাবনায় কিছুটা শুভ্রতা পাওয়া যায়
যা বোধহয় নিকোটিনেও থাকে।
নিকোটিনে অভ্যেস আমার নেই
তবে আড্ডায় নিকোটিনের ধোঁয়ায়
তোমার ভাবনা থেকে ছুটি পেয়ে যাই। 
তাই তোমার শুভ্রতা আমার মাখতে ইচ্ছে করে না।
উদ্দেশ্যহীন হাঁটার মাঝেই
তোমায় হারানো শোক উদযাপন চলে।

১৬.
 ইচ্ছে করছে সিগারেটে ধোঁয়ার কুন্ডুলি
পাকিয়ে একটা অবয়ব সৃষ্টি করতে
অবয়বটা হবে পলেস্তারা খসা দেয়ালের মতো,
সেই অবয়বটা থাকবে এক রমনীর
যার মাথা ভরতি এলোমেলো চুল
মুখে লুকানো একটু হাসি
তবে সেই হাসি দেখা গেলেও বোঝা যাবেনা
সেটা কোন রমনীর ছিলো।
কারন মনে এক ধরনের অতৃপ্তি থাকা
খুব জরুরি হয়ে উঠেছে এখন
আর সেটাকেই কাবু করতে খুব ইচ্ছে করছে।

১৭.
আজ অনেক উপাখ্যান শুনেছি তার মুখে 
মনে হয় তাকে আমি অনেক অভ্যাসবশে চিনি
কত মৌনমেলাতেই তাকে দেখা হয়েছে
আজ আবার দেখেছি নতুন সাজে, নতুন ভঙ্গিতে।
তার নব সাজে মিশে রয়েছে
কত দায়িত্ব, কত স্নেহ, সেবা
তার রুপ যেনো আজ স্রষ্টার রুপে পরিপূর্ন
তবুও তাকে আমার সম্বোধন করা হয়নি
কারন তখন আমার দেহে নেমে এসেছিল হিমযোগ
আমি তখন যেন সেই উষ্ণ মুহূর্তের
স্পর্শটা অনুভব করছি।
ইচ্ছে করছিল তখনি নিজেকে
সেই স্পর্শের মাঝে বিলীন করে দিতে
কিন্তু পারিনি, আমার পথ যে খুব অল্পতেই সীমাবদ্ধ।
তখন আবার আমি খুব ক্লান্ত বচনেই
তার মুখের উপাখ্যানটা আবার
স্তব্ধতার সাথে শুনতে শুরু করলাম।

১৮.
পরের ধনে আর কতো পোদ্দারি করবা
আর কত জ্বালাইবা শেকড়ার আগুনে
আর কত ঘসবা কত্ত কষ্টি পাথর দিয়া
আমিতো আর ধাতব না
যে ঘসলে পালটাইবো রং। 
আমারে দিয়া পোদ্দারি হইবো না
জ্বালাইতেই পারবা 
ভয় পাইয়ো না, আমি ছাই হমু না
আমার অঙ্গার ধাতবের মতো শক্তই থাইক্কা যাইবো।

১৯.
তোমার শূণ্য ডানায় গভীর বিষাদ
তোমার অচিনপুরে শুষ্ক সুখ
দুটি পাপড়ির সংস্পর্শ।

তোমার নষ্ট চাহনি জমায় রক্তের পাথর
তবুও তোমায় ভাবি নৈরাজ্যতার এই নগরে
জানি ভালোআছো,ভালো থাকবে চিরদিনই।

২০.
যাযাবর, হ্যাঁ আমি যাযাবর
পুষে রাখা স্মৃতিকে আকরে ধরেছি তো
তাই হয়তো যাযাবর হয়েছি।
হয়তো তর অভিমানটুকু যত্ন করে রেখেছি
তাই হয়তো নিজেকে যাযাবর সাজিয়েছি।
তোর কাছে হারানো মনটার জন্য
আমি উন্মাদ হয়েছি, তাই হয়তো শেষমেষ যাযাবরের খাতায় নামটা লিখিয়েই ফেলেছি।


সাজ্জাদ হোসেন পলাশ
জন্মঃ ২২ জুলাই ২০০১ খ্রি.
পিতাঃ ফজলুর রহমান 
মাতাঃ হোসনে আরা বেগম 
ঠিকানাঃ শম্ভুগঞ্জ, ময়মনসিংহ 
পেশাঃ ছাত্র (ভার্সিটি ভর্তি প্রস্তুতি) 
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানঃ শাহাব-উদ্দিন আহমেদ প্রি-ক্যাডেট স্কুল থেকে পিএসসি, শম্ভুগঞ্জ ইউ-সি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি ও এসএসসি এবং শম্ভুগঞ্জ জিকেপি ডিগ্রি কলেজ থেকে এইসএসসি।
সখঃ ঘোরাঘুরি, বাঁশি বাজানো, থিয়েটার, ছবি তোলা।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url